শরীর সুস্থ্য ও সবল রাখার পুষ্টিকর খাবারসমূহ
স্বাস্থ্য কথাঃ প্রতিদিন আমরা কয়েক বার খাবার খাই। সেই খাবার হতে পারে বাড়িতে, অফিসে, রেস্টুরেন্টে কিংবা কোনো দাওয়াতে। কিন্তু আমরা যেই খাবার খাই তা কি আমরা একটু চিন্তা করি যে আমরা কি খাচ্ছি?
বা কি খাওয়া উচিত? কি খেলে আমরা সুস্থ থাকবো বা কোন খাবারটিতে কি কি পুষ্টি উপাদন আছে? কোন খবরটি বেশি বা কম খাওয়া বা বাদ দেয়া উচিত?
বেশির ভাগ বাঙ্গালীই হয়তো প্রতিবেলাই ভাত খাচ্ছেন, মাংশ খাচ্ছেন, মিষ্টি/চিকলেট খাচ্ছেন। কেউ কেউ তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্য শর্করা বাদ দিয়ে শুধু সবজি খাচ্ছেন, বা ফলের ডায়েট করছেন। বা কেউ কেউ ওজন বাড়ানোর জন্যে বেশি বেশি ভাত খাচ্ছেন। কারো কারো দুধ খাওয়ার কথা শুনলেই বিরক্ত লাগে। কেউ হয়তো ডিম, দুধ, সবজি না খেয়ে সব বেলাতেই মাংশ খান। অনেকের প্রতি বেলা ফাস্ট ফুড না হলে চলেই না। অনেকে প্রতিদিন তো দুরের কথা সপ্তাহে একদিনও ফল খান কিনা সন্দেহ! আসলে খাবার দাবার সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই হয়তো ধারণা না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে। আর এর পরিনাম হতে পারে বিভিন্ন রকম অসুখ,(যেমন: ডায়বেটিস, হার্টের অসুখ,ক্যান্সার, ভিটামিনের স্বল্পতা ইত্যাদি) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকা আর শারীরিক বা মানসিক দুর্বলতা।
শরীর সুস্থ্য ও সবল রাখার জন্য আমাদের শরীরের সব ধরনের পুষ্টি দরকার। আমাদের শরীরের ৪০ রকমেরও বেশি পুষ্টি উপাদান দরকার হয়। কেবল একটি বা একরকমের খাবার এই সবরকমের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে না। তাই নানান রকমের খাবার আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রেখে এই পুষ্টির চাহিদা মেটাতে হয় বা পুষ্টির সামঞ্জস্য করতে হয়। আর একেই বলে ব্যালান্সড ডায়েট। আর এই ব্যালান্সড ডায়েটে সব রকমের বা অনেক রকমের খাবার থাকে বলে খাবারে এক ঘেয়েমি আসে না। শরীর থাকে সুস্থ্য ও সবল।
পুষ্টিবিদেরা বলেন,
প্রতিদিনের ব্যালান্সড ডায়েটে ৫ রকমের খাদ্য থাকতে হবে। বা ৫ শ্রেনীর খাদ্য আমাদের প্রতিদিনের তালিকায় থাকতে হবে। প্রতি গ্রুপের খাদ্য থেকে ৫ রকমের খাবার আমরা একবেলা একটি করে খাবো এবং প্রতি গ্রুপ থেকে হয়তো এক বা একাধিক রকমের পুষ্টি পাবো। তাই ৫ গ্রুপের বিভিন্ন রকমের খাবার প্রতিবেলা ও প্রতিদিন খেলেই খাদ্য তালিকায় সব রকমের পুষ্টি থাকবে। যেমন: পেয়ারাতে আছে ভিটামিন সি, কিন্তু ওমেগা-৩ নেই, যা আছে মাছে। পনিরে আছে ভিটামিন বি-১২,কিন্তু ভিটামিন সি নেই, পেয়ারায় বিটামিন বি-১২ নেই। আবার লাল আটার পুষ্টি সাদা আটার চাইতে বেশি ইত্যাদি।
আবার, এই ৫ গ্রুপের খাবারের ক্ষেত্রেও একেকটি গ্রুপের খাবারগুলোর এক একরকম পুষ্টি আছে। তাই প্রতি গ্রুপের খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রেও ভিন্নতা আনতে হবে। অর্থাৎ, প্রতিগুপের খাবারগুলোও খেতে হবে এক এক সময়/দিন এক এক রকম। যেমন: কোনো সবজিতে ভিটামিন সি বেশি,কোনটাতে আবার আয়রন বেশি ইত্যাদি। তাই বিভিন্ন রকমের সবজি এক এক বেলা এক এক রকম খেতে পারেন। আবার ফলের ক্ষেত্রে, একদিন একবেলা কমলা খেলেন, তো আরেক বেলা তরমুজ বা কলা খান। আরেকদিন একবেলা আম খেলেন, তো অন্য বেলা আপেল ইত্যাদি।
৫ রকমের খাবারগুলো হচ্ছে:
>>.শর্করা—ভাত, আটা,ময়দা,পাস্তা, নুডুলস, রুটি, সিরিয়াল বা ওটস ইত্যাদি।
>>.আমিষ—মাছ,মাংশ, ডিম, বিনস, বাদাম, টফু, ডাল।
>> শাক-সবজি, বিনস,ডাল।
>> ফল।
>> দুধ ও দুধজাত খাবার, যেমন: পনির,দই ইত্যাদি।
এছাড়াও আরেকটি উপাদান হলো ফ্যাট, যা আমাদের শরীরে অল্প দরকার হতে পারে। কিন্তু তা রান্নার তেল,বাদাম, মাছ, মাংশ, ইত্যাদি থেকেই আমরা পাই। তাই এটি আলাদা ভাবে, বা বেশি খাবার দরকার নেই।
তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় উপরের ৫ শ্রেনীর খাবার আছে কিনা তা লক্ষ্য রাখুন। এক বেলা কোনটি যদি বাদও পড়ে, তো অন্য বেলা সেটা খাবার চেষ্টা করুন বা এক বেলা একগ্রুপের একটি খাবার খান, অন্য বেলা সেই গ্রুপের আরেকটি খাবার খান।যেমন: কোনো বেলা মাছ খেলেন, তো অন্য বেলা মাংশ খান। আবার এক বেলা লাল আটার রুটি খেলেন, তো অন্য বেলা সাদা চালের ভাত খান। এক বেলা মিশানো সবজি খেলেন তো অন্য বেলা একরকমের সবজির রান্না/ভাজি খান। একবেলা রিচ ফুড বা বার্গার বা ফাস্ট ফুড খেলেন, তো অন্যবেলা কম ক্যালোরীর, কমফ্যাট যুক্ত খাবার খান। এইভাবে সব ধরনের খাবারে ব্যালান্স আনুন।
প্রতিদিনের খাবারে কম ফ্যাট ও চিনিমুক্ত খাবার রাখুন। ক্যালরি বহুল খাবার,যেমন রিচ ফুড, কেক,ফাস্ট ফুড,কোমল পানীয় পরিহার করুন। এগুলো কম পরিমানে খান, যেমন: সপ্তাহে একদিন। বা কোনো দাওয়াত বা অনুষ্ঠানে গেলে খান খুব অল্প পরিমানে। এছাড়া চিনি যুক্ত ও লবনাক্ত খাবার আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় না রাখাই ভালো। এই ধরনের খাবার ও পানীয়গুলো যথাসম্ভব কম খাওয়াই ভালো।
তবে প্রতিটি খাবারই খেতে হবে পরিমানমতো। কে কতটুকু খাবেন তা নির্ভর করবে তার শারীরিক চাহিদা ওক্যালরির চাহিদার উপর।
তবে পানি পান করতে হবে প্রচুর পরিমানে। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন।
প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করুন, কোন খাবার কিভাবে খেতে হবে। এইভাবে খেলে আর আপনার খাবারে ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব হবে না। শরীরটাও সুস্থ্য থাকবে। সেই সাথে ওজন কমানো, নিয়ন্ত্রণে রাখা ও ফিটনেস ও অর্জনে সাহায্য করবে।
!!!এধরনের আরও সুন্দর সুন্দর পোষ্ট পেতে আমাদের পেইজ এ ফলো(follow)করুন!!!